ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মানুষকে আর ঘরে রাখা যাচ্ছে না

বেড়েছে যান চলাচল ব্যাংক-বাজারে ভিড় ।। ‘করোনার ঝঁকি বুঝতে না পেরে এমন আরচরণ’
নিউজ ডেস্ক :: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নগরবাসীকে ঘরে রাখার সব রকম উদ্যোগ সত্ত্বেও সড়কগুলোতে বেড়েছে মানুষ ও যানবাহনের চাপ। সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ, প্রচার এবং সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের টহল সত্ত্বেও বন্ধ করা যাচ্ছে না মানুষের বহির্গমন প্রবণতা। মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পুলিশ। কঠোর অবস্থানে সেনাবাহিনীও। শুধু বড় সড়কেই নয়, পাড়া মহল্লায়ও সেনা অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

অফিস আদালত-শপিংমল বন্ধ, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এরপরও সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় বেড়েছে মানুষের আনাগোনা, সড়কে চলছে শত শত গাড়ি। কোথাও কোথাও রিকশা, সিএনজি টেক্সি কিংবা প্রাইভেট কারের জটলাও সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ করোনার ভয়াবহ ঝুঁকি বুঝতে না পারায় এমন আচরণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন রাস্তায় বের হয়েছেন? জানতে চাইলে সবাই বলছে জরুরি প্রয়োজনের কথা। গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিল এই চিত্র।

বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বেড়েছে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশার চলাচল। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছেন অনেকে। তবে সন্দেহ হলেই পুলিশ আটকে রাখছে গাড়ি। প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব যানবাহন থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চলছে পুলিশের এ অভিযান। প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কে গাড়ি চলাচল বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। কাঁচাবাজারেও কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে মানুষের যাতায়াত বেড়ে গেছে। এতে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও বেড়েছে। যে উদ্দেশ্যে সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ করা হয়েছে, গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। তারা বলেন, আওতামুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্যগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। প্রসঙ্গত অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবা, সংবাদকর্মী, চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত এবং পণ্যবাহী গাড়ি আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

গতকাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ দিন যানবাহন চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের চাইতে অনেক বেশি। বিশেষ করে রেয়াজউদ্দিন বাজার, স্টেশন রোড, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনের চাপে রীতিমতো যানজটের সৃষ্টি হয়। রিকশা ও প্রাইভেট কারের পাশাপাশি ট্যাঙি, পিকআপ, মোটর সাইকেল, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়। মোড়ে মোড়ে ছিল রিকশার অবস্থান। রাইড শেয়ারিং বন্ধ থাকলেও অনেক স্থানেই মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন চালকরা। অলিগলির প্রায় বেশিরভাগ দোকানই খোলা ছিল।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামেই শুধু নয়, সারা দেশেই নিম্ন আয়ের মানুষ কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীরাও কাজের পাশাপাশি সাহায্যের আশায় অলি গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা রাস্তায় বের হচ্ছে কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজের নামে। নগরীর রাস্তায় বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও। আর গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাকে যেন সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। মানুষ অনেকটা আগের মতোই চলাফেরা করছে।

অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরির বাইরে পেটের দায়ে আবার ঘর থেকে বের হচ্ছেন দুস্থ-গরিবরা। বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর সংসার চলে সেই নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। বেকার হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হলেও তা এখনো অপ্রতুল। প্রান্তিক এই মানুষদের সহায়তা করার জন্য নগরীর অনেক স্থানে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা, এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করছেন অনেকেই। তারা নিজেদের মতো করে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। এজন্য ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গতকাল এবং আজও  বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে সাহায্য প্রত্যাশী নারী-পুরুষের ভিড় দেখা গেছে। তাদের সবার প্রায় অভিন্ন কথা। কাজ নেই, খাবার নেই। তাই সাহায্যের জন্যে বাসার বাইরে এসেছেন তারা। কেউ সাহায্য নিয়ে আসলেই দৌঁড়ে সেদিকে ছুটে যাচ্ছেন সবাই। এ সময় একজন আরেকজনের গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে সাহায্য নিচ্ছেন। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে বললেও তারা মানছেন না।

পাঠকের মতামত: